Saturday, July 9, 2022

আরিয়ান খান

আমি আরিয়ান খান, বয়স এখন আনুমানিক চল্লিশের কাছাকাছি। আমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ছোট্ট এক পাহাড়ি এলাকায় যেটাকে সি আর বি বলে, তখনো বলা হতো । তখনকার সি আর বি আজকের মত এতটা প্রসিদ্ধ ছিলনা। সি আর বি এখন অনেক প্রানবন্ত প্রতিদিন মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকে, কেননা বর্তমানে সি আর বি চট্টগ্রাম শহরের একটি বিনোদন কেন্দ্র তথা ফ্রিতে বসে সময় কাটানোর জায়গা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর এক মনোরম স্থান। প্রতি বছর এখানে বৈশাখী মেলা হয়, পহেলা বৈশাখে ইংরেজি মাসের ১৪ ই এপ্রিল। এছাড়াও বিভিন্ন দিবসে এটি থাকে জন মানবে সরব একটি স্থান। বাবা চাকরী করতেন তৎকালীন চীপ মেডিকেল অফিসার অব রেলওয়ে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম এর অধীনে। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমার বাবা অনেক বড় সরকারী চাকরিজীবী ছিলেন, না আমার বাবা মোটেও খুব বড় বা মাঝারি কিংবা ছোট মানের অফিসার ছিলেন না, আব্বু তখন সি এম ও এর অধীনে উনার ব্যাক্তিগত গাড়ীর চালক ছিলেন। জন্মের পরে শৈশবকাল ভালোই কাটছিল আমার, আমি বাবা মার একমাত্র আদরের সন্তান ছিলাম। আব্বু আম্মু দুজনেই প্রচন্ড রকম আদর করতেন যা চাইতাম কিংবা যা বায়না দরতাম দেয়ার মত হলে, উনারা সেটা ব্যবস্থা করে দিতেন। আর আমিও মানুষের কাছে যা দেখতাম তা চাইতাম। ভাগ্যিস আমাদের সোসাইটি খুব বেশী রীচ ছিলনা তাই বাবা মাও পার পেয়ে গেছেন মনে হচ্ছে, নয়তো কি না কি দেখতাম আর ওটাই চেয়ে বসতাম। সেটার এক জলজ্যান্ত প্রমান হলো একদিন সিরাজ আংকেল ছেলে, মকবুল ছিলো ওর নাম, সে একটি পেয়ালায় ভরে ভাতের মাড় খাচ্ছিলো। আমি যেই দেখলাম অমনি আমি ভাতের মাড় খাবো মাড় খাবো বলে কান্নাকাটি করতে শুরু করে দিলাম, মাও আমার নিরুপায় হয়ে ভাত রান্না করে, ভাতের মাড় দিতে হলো।  

 

ছোট ছিলাম অনেক, আমার আনন্দঘন শৈশবকাল খুব বেশীদিন স্থায়ী হলোনা। কোন একজন অজানা রুলস এর কারনে আব্বুর চাকরীটা চলে গেলো। আপনারা হয়তো ভাবছেন বাবাকে চাকরী থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে কোন ব্যাক্তিগত দোষ ত্রুটির কারণে, না সেটা কখনো হবার ছিলোনা কারণ আমার বাবা ছিলেন আমার দেখা সবচেয়ে নম্র ভদ্র স্বভাবের একজন মাটির মানুষ বলা যেতে পারে। উনি তৎকালীন এরশাদ সরকারের আইন কানুনের মারপ্যাঁচ পড়ে অবসরে চলে যেতে বাধ্য হন। যাই হোক কষ্ট করে রশিদ সাহেব নামের এক ভদ্রলোক মিমি সুপারের পিছনে বাসা ছিলো, উনার ওখানে চাকরী নিলে। আর আমরা চলে গেলাম হালিশহর নামক এক প্রত্যান্ত অঞ্চল বন্দরটিলায়। এখন অবশ্যই হালিশহর কিংবা বন্দরটিলা সবার কাছে অনেক পরিচিত কারন পাশেই আছে দু-দুটো ইপিজেড একটি হলো সিইপিজেড অপরটি হলো কেইপিজেড, এই দুটি সুপরিচিত অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থান হওয়ার কারণে বন্দরটিলা এলাকাটা ও খুব চেনা জানা পরিচিত হয়ে উঠলো। তবে এটি অন্য কোন কারণে নয় ভাড়া ঘরের জন্যে বিখ্যাত হয়ে উঠলো সবচেয়ে বেশী। ধরে নিতে পারেন গাজিপুর কিংবা সাভারের আশে পাশের জায়গা যেমনটা মুল্যবান এখন ঠিক তেমনি বন্দরটিলাও। তবে মানুষগুলো আগে যা ছিলো এখনো তাই আছে স্বভাব তাদের কিঞ্চিত পরিমান ও বদলায়নি, যদিও টাকা পয়সা হয়েছে অনেক।  

 

ওখানে আমাদের বড় খালামনি থাকতো যাকে আমি বড় আম্মু আর বড় খালুকে বড় আব্বু বলেই ডাকতাম। বাবা মায়ের পরে উনারাই আমার সবচেয়ে আপন এবং প্রিয় মানুষ ছিলেন। বাবা চাকরী ঠিক করে কিছুদিন পর আমাদের সাথে থাকতে শুরু করলেন। আমাদের তিনজন পরিবার এখন পাঁচ জনের সুন্দর একটি পরিবারে রূপ নিল। ও একটা কথা বলা হয়নি বড় আম্মুর গর্ভে কোন সন্তান ছিলোনা তাই জন্মের সময় বড় আম্মু আম্মুকে বলেছিল আমাকে যেন উনাকে একবারে দত্তক দিয়ে দেয়, দুই বোনের ভিতর একটা অলিখিত চুক্তি হলো। একজনের আমি পালকপুত্র অন্যজনের আপন। এইভাবেই আমার দিন কেটে যাচ্ছে। বড় আব্বু বড় আম্মুকে বিয়ে করার পুর্বে আরো দুটো বিয়ে করেছিলেন, একজন স্ত্রী মারা যাওয়ার পর উনি আরেকটা বিয়ে করেছিলেন। দুজনের ঘরে দুটো মেয়ে আছে, দুজনের স্বভাব দুরকম ছিলো একজন ছিল খুব শান্ত আরেকজন ভীষন রকম ফাজিল এবং দুষ্ট। এই ফাজিল এবং দুষ্ট মেয়ের মাকে তালাক দিয়ে বড় আব্বু আমার বড় আম্মুকে বিয়ে করেন। বড় আব্বু এক সময় জাহাজের সুকানী ছিলেন, তবে আমি যখন উনাকে পাই তখন একেবারে অবসরে চলে গেলেন। চাকরী বাকরি কিছুই নাই, মানুষের ছেলে মেয়েদের কোরান শিক্ষা দিতেন আর বিনিময়ে আর যা পেতেন তা দিয়ে উনার সংসার চলতো। বাবা আসার পর উনাদের পরিবারে একটা স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসলো। আমরা খুব  ভালো ভাবেই দিন কাটাচ্ছি আর বড় মেয়েটা উনার ছেলে মেয়েদের প্রায় বেড়াতে আসতেন আমাদের ওখানে। তখন মেহমান দেখলে আমার অসম্ভব রকম ভালো লাগতো আমি ও মনে মনে চাইতাম মেহমান না চলে যায়। দু-তিন থেকে ওরা চলে যেতো, আর অমনি আমার মনটাও ভীষন খারাপ হয়ে যেতো।  

Asus VivoBook

Acer Nitro 5|| Gaming Laptop|| Amazon Products|| Acer Predator Helios 30...

Apple MacBook Pro 14 M4 Review: Performance, Features, and Price Comparison

  Introduction The Apple MacBook Pro 14 (M4) is designed to cater to professionals and content creators, offering powerful features and...